ঘোড়ার রোগ: স্ট্র্যাংগলস /Strangless বা Equine distemper:
ঘোড়া সিরিজঃ পর্ব -০৭ঃ
ঘোড়ার রোগ:
#স্ট্র্যাংগলস /Strangless বা Equine distemper:
স্ট্র্যাংগলস ঘোড়ার একটি তীব্র সংক্রামক ব্যাধি। ঊর্দ্ধশ্বাসনালীর (URT) প্রদাহ এবং পুঁজযুক্ত লসিকাগ্রন্থির (Lymphnodes) পুঁজ এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই রোগ ঘোড়ার চোয়ালের হাড়ের সাথে অবস্থিত লসিকাগ্রন্থিকে বড় করে ফেলে। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয় (Strangled breathing)। পুঁজ মিশ্রিত লসিকাগ্রন্থি এবং গলায় প্রদাহ শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করে, তাই এই রোগকে স্ট্র্যাংগলস বলে।
#রোগের কারণঃ
স্ট্রেপটোকক্কাস ইকুই (Streptococcus equi) দ্বারা হয়।
# ৬ মাসের নিচে এবং বয়স্ক ঘোড়া এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ঘোড়ার ইমিউনিটি কম তাই এরা বেশি সংবেদনশীল।
#ঠান্ডা আবহাওয়া, অপর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এই রোগ বিস্তারের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
#ঘোড়া ছাড়া গাধা ও খচ্চরেরও স্ট্র্যাংগলস হতে পারে।
#যেভাবে ছড়ায়ঃ
* আক্রান্ত ঘোড়ার নাকের নিঃসরণ ও পুঁজের মাধ্যমে সুস্থ ঘোড়াতে ছড়ায়।
* মুখোমুখি সংস্পর্শে, দূষিত খাবার পাত্র, পানির পাত্র, হাত, গ্রুমিং, টুলস্ ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়ায়।
* স্ট্রেপটোকক্কাস ইকুই (Streptcoccus equi) সরাসরি মুখ দ্বারা গ্রহণ করার মাধ্যমে ছড়ায়।
* মাছি ও বিভিন্ন কীটপতঙ্গের মাধ্যমে ছড়ায়।
* দূষিত বিছানাপত্র পরিবহনের গাড়ি, চারণভূমির মাধ্যমে ছড়ায়।
#রোগের সুপ্তাবস্থাঃ
এরোগের সুপ্তিকাল ৪-৮ দিন। সাধারণত আক্রান্তের হার ১০-১০০% এবং মৃত্যুহার ১-২%। আক্রান্ত হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়।
*দৈহিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় (স্বাভাবিক ৯৯.৬-১০০.৮০ ফাঃ)।
* অরুচিভাব।
* অস্থিরতা।
* নাক দিয়ে তরল পদার্থ বের হয়।
* লসিকাগ্রন্থি ফুলে যায় এবং প্রচন্ড ব্যথা হয়।
* লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
* ফোড়া কখনো কখনো গলা থেকে মস্তিষ্ক, যকৃত ও ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়ে। এই ধরনের সংক্রমণকে Bastard Strangles বলে।
* এ রোগের স্থায়িত্ব ২০-২৫ দিন।
* জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
* পালে নতুন ঘোড়া আসলে তাকে পৃথকভাবে রাখতে হবে।
* থাকার জায়গা (Stalls), খাদ্য ও পানির পাত্র এবং অন্যান্য সরঞ্জাম সবসময় জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
* বাণিজ্যিকভাবে এ রোগের ভ্যাকসিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। প্রথম বার ভ্যাকসিন দেয়ার ৩ সপ্তাহ পর বুস্টার ডোজ দিতে হবে এবং ৬ সপ্তাহে দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ দিতে হবে (প্রথম ভ্যাকসিনের দিন থেকে গণনা করে)। ভ্যাকসিনের কার্যকাল ৬-১২ মাস।
#বিশেষ পরামর্শঃ
আক্রান্ত ঘোড়াকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে কম্বল জড়িয়ে রাখতে হবে। নরম রুচিকর খাবার সরবরাহ করতে হবে। প্রয়োজনে নাক পরিষ্কার করে গরম পানির ভাপ প্রয়োগ করতে হবে। এমনকি প্রয়োজনে ফোঁড়াযুক্ত লসিকাগ্রন্থি অপারেশন করতে হবে।
No comments