পোল্ট্রি সেক্টরে বাকির দুষ্টচক্র:
পোল্ট্রি সেক্টরে বাকির দুষ্টচক্র:
পোল্ট্রি সেক্টরে একটা বড় ধরনের দুষ্টচক্র আছে। সবাই যে দুষ্ট তা নয়, অবশ্যই মুষ্টিমেয় ভালো আছে। তবে অধিকাংশই এই দুষ্টচক্রের ভিতরে ঘুরপাক খাচ্ছে।
অধিকাংশ খামারি নিজের পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করতেছেনা। তারা ডিলারের নিকট বাকিতে ফিড ও মেডিসিন কিনে মুরগি পালতেছে। যখন ব্যবসায় লস খাচ্ছে তখন ফিডের ডিলার বা মেডিসিনের টাকা আটকায় দিচ্ছে।
যখন ডিলারের টাকা আটকে যাচ্ছে তখন ডিলাররা কোম্পানির পাওনা টাকা আটকে দিচ্ছে।
যখন কোম্পানির টাকা আটকে যাচ্ছে, তখন কোম্পানি টিকে থাকার জন্য তার প্রডাক্টের কোয়ালিটি কমায় দিচ্ছে।
যখন কোম্পানি কোয়ালিটি কমায় দিচ্ছে তখন খামারি তার প্রাপ্য কোয়ালিটির প্রডাক্ট পাচ্ছেনা বিধায় আরো বেশি লস খাচ্ছে। আর লস খেয়ে আবারো ডিলারের টাকা আটকায় দিচ্ছে। এভাবে প্রত্যেকে প্রত্যেককে ঠকাচ্ছে যার কারণে কেউই ভালো নাই।
এই সেক্টরটা বাকির দুষ্টচক্রে পতীত হবার পেছনে মূল কারণ হলো অতিরিক্ত লোভ আর একই দিকে বাঙ্গালীর গণহারে ঝুঁকে পড়ার টেনডেন্সি। যার নিজস্ব পুঁজি আছে তারই খামার দেয়া উচিত। হতে পারে তার অল্প পুজি আছে, সে ছোট আকারে শুরু করবে। যারা নিজের পুঁজিতে ব্যবসা করেছে তারাই মোটামুটি টিকে আছে।
আর সবার একই দিকে ঝুঁকে পড়ার টেনডেন্সিও বর্জনীয়। আমার বুয়েট পাশ এক ফ্রেন্ড একদিন ফোন দিয়ে বলতেছে, দোস্ত শহরে আমার বাড়ির পাশে একটু ছোট জায়গা আছে। ওইখানে আমি একটা মুরগির ফার্ম দিতে চাচ্ছি। আমি তাকে বললাম, দোস্ত শহরে আবাসিক এলাকায় না দেয়াই ভালো হবে, আর এই ব্যবসায় লসের প্রচুর ঝুঁকি আছে। অর্থাৎ সবাইকে গণহারে মুরগির ফার্ম দিতে উৎসাহিত করার প্রয়োজন নাই। কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের পোল্ট্রি শিল্পের সকল প্রডাক্ট দেশের ভিতরেই কনজিউম হয়, কোন প্রডাক্ট রপ্তানী হয় না। কাজেই চাহিদার তুলনায় যোগান বেশি হলে খামারি কখনই ন্যায্য বাজারমূল্য পাবে না, বরং লস খেতেই থাকবে।
গতবছরের মতো এবছরও অক্টোবর মাসের পর থেকে পোল্ট্রি পণ্যের বাজারে মন্দা শুরু হয়েছে। অগণিত খামারি লসের বোঝা মাথায় নিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে৷ এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ হলো নিজস্ব ক্যাশে ব্যবসা করা। ক্যাশে ব্যবসা করলে ফিডের খরচ (যা খামারের টোটাল খরচের প্রায় ৭০-৮০%) অনেক কমে যাবে। লাভের পরিমাণ বাড়বে, ডিলার ও কোম্পানি ভালো থাকবে, ভালো থাকবে প্রডাক্টের কোয়ালিটিও।
এই সেক্টরের একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পাশাপাশি কনসালটেন্ট হিসেবে নিজের অবজারভেশন শেয়ার করলাম। সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত আশা করতেছি।
Dr Md Tauhidur Rahman DVM,DPG
No comments